Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় নিরাপদ খেজুরের রস ও গুড়

পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তায় নিরাপদ খেজুরের রস ও গুড়

ড. মো. আমজাদ হোসেন১ ড. সমজিৎ কুমার পাল২ ড. মোছা. কোহিনুর বেগম৩ ড. মো. শামসুল আরেফীন৪


স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত মানের খেজুরের গুড় বা সিরাপ উৎপাদনের জন্য রস সংগ্রহ প্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য কমপক্ষে ৫-৭ বছর বয়সের সুস্থ গাছ নির্বাচন করা উচিত। সুস্থ সবল গাছ নির্বাচন করলে অধিক রস আহরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি গাছী  নির্বাচন  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ রস সংগ্রহ গাছীর দক্ষতার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। খেজুরের রস সংগ্রহ গাছ কাটার উপর নির্ভর করে। অধিক রস আহরণের জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে গাছ কেটে রস সংগ্রহ করার চেয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে গাছ কেটে রস সংগ্রহ অতি প্রয়োজন। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ গাছী  দিয়ে গাছ কাটা ও রস সংগ্রহ করলে রস আহরণ হার ও গাছের স্থায়িত্ব উভয়ই বৃদ্ধি পায়।


খেজুর রস সংগ্রহের জন্য কিভাবে গাছ কাটতে হবে, গাছের কোন অংশে কতটুকু কোন সময়ে, কাটতে হবে, বেশি পরিমাণ রস এবং সর্বোপরি গাছটি কিভাবে বেশি দিন দীর্ঘস্থায়ী হয় সে ধারণা থাকতে হবে। এসব ধারণা বা বৈজ্ঞানিক জ্ঞান না থাকলে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনকি গাছ মারাও যায়। ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে খেজুরের রস সংগৃহীত হয়। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি অর্থাৎ কার্তিক মাসের প্রথম দিকে গাছ পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়। গবেষণায় দেখা গেছে  গাছের বেড়ের ১/৩ অংশ লম্বা ও ৭.৫ সেমি. প্রস্থ করে গাছ কাটলে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায় এবং গাছের কোন ক্ষতিও  হয় না।


অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি (কার্তিক মাসের প্রথম দিকে) গাছ পরিষ্কার এর কাজ শুরু করা দরকার। গাছ পরিষ্কার করার পর পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন গাছ ছাঁটতে হয় যাতে গাছ থেকে রস  নিঃসরণ শুরু হয়। কোন কোন গাছ ছাঁটা শুরুর ৩-৪ দিনের মধেই রস নিঃসরণ শুরু হয়। এরপর ছাঁটা অংশের যেখানে রস নিঃসরণ শুরু হয় সেখানে একটি ইউ (ঁ) আকৃতির চিকন প্রায় ৭-৮ ইঞ্চি বাঁশের কাঠির আধা ইঞ্চি পরিমাণ গাছে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ইউ আকৃতির কাঠির মধ্য দিয়ে রস ফোঁটায়     ফোঁটায় গাছের ঝুলন্ত হাঁড়িতে জমতে থাকে। তবে গাছ একবার ছেঁটে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করা উচিত এবং পরবর্তী ২-৩ দিন গাছ শুকাতে দিতে হয়। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে গাছ দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি


গাছে দৈনিক ১০-২০ লিটার রস নভেম্বর মাস হতে মধ্য মার্চ মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। রস সংগ্রহের পর মাটির হাঁড়ি প্রতিবার ধুয়ে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকাতে হবে অথবা আগুনে সেঁকে নিতে হবে। এতে সংগৃহীত রস নষ্ট হবে না। অনেক সময় কাঠবিড়ালী, বুলবুলি, কাক, কাঠঠোকরা ইত্যাদি পাখি খেজুরের হাঁড়িতে বা রসের নলে বসে রস খায়। এসব পশু পাখির মাধ্যমে যেন কোন রোগ জীবাণু না ছড়ায় বা রস দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এজন্য  খেজুরের গাছে হাঁড়ি ঝুলানোর সময় রসের হাঁড়ির মুখে জাল বা নেট দ্বারা এমনভাবে ঢেকে দিতে হবে যাতে কাঠি থেকে হাঁড়িতে রস পড়তে কোন অসুবিধা না হয় বা নেটের সঙ্গে রস লেগে না যায়।


খেজুরের গুড়/পাটালি তৈরি করতে খেজুরের রস/সিরাপ ভালোভাবে ছেঁকে নিয়ে কড়াইয়ের মধ্যে রেখে জ্বাল দিতে হবে। ফুটন্ত ঘনীভূত রস হাতলের সাহায্যে লাগাতার নাড়তে হবে এবং চুলার তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে আনতে হবে। চুলা থেকে গুড় নামানোর সময় মিশ্রিত করতে চাইলে হাতলের সাহায্যে গুড় অর্থাৎ এক চিমটি পরিমাণ গুড় ২০০ মিলিলিটার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। পানিতে গুড় দ্রুত জমাটবদ্ধ হলে বুঝতে হবে গুড় চুলা থেকে নামানোর উপযোগী হয়ে গেছে এবং চুলা থেকে গুড়সহ কড়াই দ্রুত নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে এবং ছাঁচে ঢালতে হবে। পুষ্টিগুণ বিচারে খেজুরের রস থেকে প্রস্তুতকৃত গুড় উৎকৃষ্টমানের। এতে বিদ্যমান প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি। খেজুরের গুড় সাদা চিনির একটি চমৎকার পরিপূরক। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিদ্যমান।


প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরের রসে প্রোটিনের পরিমাণ ১.০৮ গ্রাম, লিপিডের পরিমাণ ১.১৫ গ্রাম, ফাইবার ০.১৮ গ্রাম, অ্যাস ০.৪৬ গ্রাম, শর্করা ৮৫.৮৩ গ্রাম, রিডিউসিং সুগার ৩.৯৫ গ্রাম, ক্যালরি ৩৫৮ কিলোক্যালরি। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান। ভিটামিন এ ৪১০ আইউ (ওট), থায়ামিন (ভিটামিন বি ১) ০.৫ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম, রাইবোফ্লোবিন (ভিটামিন বি ২) ০.৬২ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম, নিয়াসিন (ভিটামিন বি ৩) ১২.৩ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম, প্যানটোথেনিক এসিড (ভিটামিন বি ৫) ০.১২৭ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম, পাইরিডক্সিন (ভিটামিন বি ৬) ০.৪৫ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম, এসকরবিক এসিড (ভিটামিন সি) ১২.৭৫ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম । এ ছাড়াও সামান্য পরিমাণে ফলিক এসিড (ভিটামিন বি ৯), সায়ানোকোবালঅ্যামিন  (ভিটামিন বি ১২), কোলেক্যালসিফেরল (ভিটামিন ডি ২ ও ডি ৩), বায়োটিন (ভিটামিন এইচ) ও ফাইটোনাডিওন (ভিটামিন কে) রয়েছে যার পরিমাণ  নির্ণয়যোগ্য মাত্রার নিচে।


ম্যাক্রো উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম ৪.৭৬ মিলি.গ্রাম/১০০ গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ২.২৩ মিলি.গ্রাম/১০০ গ্রাম, পটাশিয়াম ৮০ মি.গ্রাম/১০০ গ্রাম, ফসফরাস ১৮০.৯ মিলি.গ্রাম/লিটার। এতে সোডিয়াম ১৮.২৩ মিলিগ্রাম/১০০ গ্রাম, কপার  ২.১৩  মিলিগ্রাম/লি, জিংক ৭.২৩ মিলিগ্রাম/লি, আয়রন ১৫.৮ মিলিগ্রাম/লি।    
এটা অনেক খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে এবং এতে কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক অথবা কৃত্রিম উপাদান নেই। এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং ঔষধি গুণাগুণ বিদ্যমান। এটা শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এবং ঠান্ডা, কাশি সারাতে সাহায্য করে।


খেজুরের গুড়ে উচ্চমাত্রার কম্পোজিট কার্বহাইড্রেট বিদ্যমান যা স্বাভাবিক চিনির চেয়ে খাবারকে দ্রুত হজম করে। এতে উচ্চ মাত্রার ডায়েটারি ফাইবার বিদ্যমান যা কন্সটিপেসান,    অনিয়মিত বাউয়েল মুভমেন্ট এবং অপরিপাকজনিত সমস্যা দূর করে। খেজুরের গুড় মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করে। প্রতিদিনের ডায়েটে এক টেবিল চামচ গুড় যোগ করলেই দ্রুত এর ফলাফল পাওয়া যায়। শুষ্ক কাশি, ঠাণ্ডা এবং এজমা সারাতে খেজুর গুড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটা মিউকাস দূরীকরণের মাধ্যমে শ্বাসযন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে।


খেজুরের গুড়ে উচ্চমাত্রার আয়রন থাকায় এটা হিমোগ্লোবিন লেভেল বাড়ানোর মাধ্যমে অ্যানেমিয়া দূর করে। এতে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম নার্ভাস সিস্টেমকে পরিচালিত করে। এ গুড় একইভাবে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং পটাশিয়ামও সমৃদ্ধ।


খেজুরের গুড় ক্যালসিয়ামের একটি চমৎকার উৎস যা হাড়কে শক্তিশালী করে। এটি আর্থারাইটিস, জয়েন্টের ব্যথা এবং অন্যান্য হাড়জনিত সমস্যাগুলোও দূর করে। পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায়  এটা শরীরের  ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রণ করে।

 

লেখক : ১মহাপরিচালক, ২পরিচালক (গবেষণা), ৩মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৪ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বিএসআরআই, ঈশ্বরদী, পাবনা। মোবাইল: ০১৭৩১৯১৯১৭৪; মেইল:  kohinoorbegum.bsri@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon